যখন কোনো ঋণগ্রহীতা মারা যান, তখন ঋণের বাকি পরিমাণ পরিশোধের দায়িত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে। এই পরিস্থিতি অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েন, বিশেষ করে যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব কার ওপর পড়বে তা ঋণের প্রকার, ঋণগ্রহীতার কোনো যৌথ ঋণগ্রহীতা বা গ্যারান্টি থাকলে, এবং কোনো ইনস্যুরেন্স পলিসি থাকলে তার ওপর নির্ভর করে।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব, ঋণগ্রহীতার মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব কিভাবে ভাগ করা হয়, এবং এটি কীভাবে বিভিন্ন ধরনের ঋণে প্রভাব ফেলে।
১. ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব কার ওপর পড়বে?
যখন ঋণগ্রহীতা মারা যান, তখন সাধারণত তাদের অ্যাকাউন্টে থাকা সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে ঋণের বাকি পরিমাণ পরিশোধ করা হয়। যদি তাদের মরণোত্তর সম্পত্তিতে যথেষ্ট সম্পদ না থাকে, তবে এটি ঋণগ্রহীতার আইনগত উত্তরাধিকারীদের ওপর পড়তে পারে।
এখানে আমরা দেখব, বিভিন্ন ধরনের ঋণে ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব কিভাবে ভাগ করা হয়:
২. মৃত্যুর পর হোম লোনের ঋণ পরিশোধ কিভাবে হবে?
হোম লোন বা মর্টগেজ লোন একটি সুরক্ষিত ঋণ, যা প্রপার্টি দিয়ে গ্যারান্টি করা থাকে। যখন ঋণগ্রহীতা মারা যান, তখন ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব কিছু বিষয় অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে:
- যৌথ ঋণগ্রহীতা: যদি ঋণগ্রহীতা কোনো যৌথ ঋণগ্রহীতাকে অন্তর্ভুক্ত করেন, তবে ঐ যৌথ ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নেবেন। যৌথ ঋণগ্রহীতা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ঋণের চুক্তিতে সই করেছেন এবং ঋণ পরিশোধে সমানভাবে দায়ী।
- গ্যারান্টি: যদি ঋণের জন্য কোনো গ্যারান্টি থাকে, তবে ঋণদাতা গ্যারান্টির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করতে পারেন।
- আইনগত উত্তরাধিকারী: যদি কোনো যৌথ ঋণগ্রহীতা বা গ্যারান্টি না থাকে, তবে আইনী উত্তরাধিকারী ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিতে পারেন, তবে এটি শুধুমাত্র উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির পরিমাণ অনুযায়ী।
- ইনস্যুরেন্স কভারেজ: যদি ঋণগ্রহীতা হোম লোন ইনস্যুরেন্স গ্রহণ করে থাকেন, তবে ওই ইনস্যুরেন্সের টাকা সরাসরি ঋণদাতার কাছে চলে যাবে এবং ঋণের বাকি পরিমাণ পরিশোধ হয়ে যাবে।
যদি কোনো ইনস্যুরেন্স না থাকে এবং যৌথ ঋণগ্রহীতা না থাকে, তবে ঋণদাতা প্রপার্টিটি বাজেয়াপ্ত করে ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করতে পারে।
৩. মৃত্যুর পর কার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব থাকবে?
গাড়ির লোনও সুরক্ষিত ঋণ হয়, যার জন্য গাড়ি নিজেই গ্যারান্টি হিসেবে থাকে। ঋণগ্রহীতা মারা গেলে, এই ঋণের বাকি পরিমাণ পরিশোধের দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদের ওপর পড়ে। এখানে কী হতে পারে:
- আইনগত উত্তরাধিকারী: যদি আইনগত উত্তরাধিকারী গাড়িটি রাখতে চান, তবে তাদেরকে ঋণের বাকি পরিমাণ পরিশোধ করতে হবে।
- রিপোজেশন: যদি উত্তরাধিকারী ঋণ পরিশোধ করতে ইচ্ছুক না হন, তবে ঋণদাতা গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করতে পারে এবং তা বিক্রি করে ঋণের বাকি পরিমাণ পরিশোধ করতে পারে।
এ কারণে, আইনগত উত্তরাধিকারীদের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া, যাতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
৪. পার্সোনাল লোন ও ক্রেডিট কার্ড ঋণের ক্ষেত্রে কী হয়?
পার্সোনাল লোন এবং ক্রেডিট কার্ডের ঋণ সাধারণত অসুরক্ষিত ঋণ হয়, যার কোনো গ্যারান্টি থাকে না। ঋণগ্রহীতা মারা গেলে, এই ঋণের পরিশোধের ক্ষেত্রে সাধারণত এইভাবে কাজ হয়:
- যৌথ ঋণগ্রহীতা: যদি কোনো যৌথ ঋণগ্রহীতা থাকে, তবে তাদেরকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
- গ্যারান্টি না থাকলে: যদি কোনো যৌথ ঋণগ্রহীতা না থাকে, তবে ঋণদাতা আইনী উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধ দাবি করতে পারেন না। এর পরিবর্তে ঋণকে একটি "নন-পারফর্মিং অ্যাসেট" (NPA) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হতে পারে।
৫. আইনগত উত্তরাধিকারীদের দায়িত্ব
আইনগত উত্তরাধিকারীকে ঋণের পরিশোধের দায়িত্ব নিতে হবে কেবলমাত্র যতটুকু সম্পত্তি তারা উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছেন। যদি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির মূল্য ঋণের পরিমাণের চেয়ে কম হয়, তবে উত্তরাধিকারী কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন:
- ঋণ পরিশোধ করা: যদি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির মূল্য ঋণের পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়, তবে ঋণ পরিশোধ করা উচিৎ।
- সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়া: যদি ঋণের পরিমাণ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির তুলনায় বেশি হয়, তবে উত্তরাধিকারী ঋণদাতাকে সম্পত্তি ছেড়ে দিতে পারেন, যাতে ঋণদাতা ঋণ পরিশোধের জন্য সম্পত্তিটি বিক্রি করতে পারে।
- আইনজীবীর সাথে পরামর্শ: ঋণের পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইনগত পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ এটি সম্পত্তির মূল্য এবং ঋণের পরিমাণের উপর নির্ভর করবে।
৬. ঋণ পরিশোধে ইনস্যুরেন্সের ভূমিকা
ঋণ ইনস্যুরেন্স, যেমন মর্টগেজ প্রোটেকশন ইনস্যুরেন্স বা টার্ম লাইফ ইনস্যুরেন্স, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের পলিসি মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য একটি বিশাল আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
- মর্টগেজ প্রোটেকশন ইনস্যুরেন্স: এই ইনস্যুরেন্স পলিসি যদি নেওয়া থাকে, তবে মৃত্যুর পর ঋণগ্রহীতা মারা যাওয়ার কারণে ঋণদাতার কাছে ঋণের বাকি পরিমাণ পরিশোধ করা হয়।
- টার্ম লাইফ ইনস্যুরেন্স: এই পলিসির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, যা ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি ঋণগ্রহীতা সঠিক ইনস্যুরেন্স পলিসি নিয়ে থাকেন, তবে তার পরিবার ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থনৈতিক চাপ অনুভব করবে না।
ঋণগ্রহীতা মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব অনেক বিষয় নির্ভর করে, যেমন ঋণের প্রকার, যৌথ ঋণগ্রহীতা, গ্যারান্টি, এবং ইনস্যুরেন্স। সাধারণভাবে, এই দায়িত্ব মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ওপর পড়ে, এবং আইনি উত্তরাধিকারীরা কেবল তাদের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির পরিমাণ অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নেবেন।
ঋণগ্রহীতা হিসেবে, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে সঠিক ইনস্যুরেন্স কভারেজ নেওয়া হয়, যাতে পরবর্তীতে পরিবার কোনো ঋণ পরিশোধের চাপ না অনুভব করে।